ব্রিটেনে নতুন ভিসা সিস্টেমের পরিকল্পনা, হতাশ লাখো বাংলাদেশি

0 17

ব্রিটেনে লেবার সরকার ক্ষমতায় এলে অভিবাসনের পথ সহজ হবে, এমনটাই আশা ছিল অভিবাসী কমিউনিটিতে। লেবার অপেক্ষাকৃত অভিবাসীবান্ধব, দীর্ঘদিনের এই ধারণাটিকে ভুল প্রমাণ করে অভিবাসীদের জন্য দেশটিতে রীতিমতো নতুন ভিসা সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এতে দেশটিতে থাকা বৈধ কাগজপত্রবিহীন অসংখ্য বাংলাদেশিদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে।

জানা গেছে, এরম‌ধ্যেই অভিবাসীদের পরিবারের সদস্যরা কম সংখ্যায় যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ করছেন। কেননা, ইস্যুকৃত ভিসার সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশের বেশি কমে গেছে। একজন ছাত্র বা অভিবাসী কর্মী হিসেবে ভিসা পাওয়া এখন অতী‌তের ম‌তো সহজ নয়।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের ভিসা দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে সরকার। গত বছর দক্ষ শিল্প শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০, যা চলতি বছর কমে ২ লাখ ৬২ হাজারে নেমে এসেছে। যুক্তরাজ্যে আসা ডিপেন্ডেন্ট বা নির্ভরশীলদের সংখ্যাও প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অভিবাসী কর্মীদের নির্ভরশীল‌দের সংখ্যা নেমে গেছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯০০ তে।

একটি নতুন কর্মসংস্থান আইন ও বিদেশি শ্রমিকদের বিষয়ে দেওয়া বক্ত‌ব্যে ব্যবসার মালিকদের বিদেশি অভিবাসী শ্রমি‌কের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরামর্শ দিয়ে‌ছেন ব্রিটে‌নের রাজা চার্লস। এর পরিবর্তে স্থানীয় নাগরিকদের চাকরিতে প্রবেশাধিকার দিতে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নকে স্থানীয় শ্রম ব্যবস্থার অংশ করার বিষয়ে জোর দেওয়ার সুপা‌রিশ করেছে সরকার।

রাজার নির্দেশনা মতো নতুন নিয়মের অনুমোদন দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

যুক্তরাজ্যে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের বার্ষিক বেতনসীমা বাড়‌ছে। এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে ব্রিটে‌নে বসবাসের আশায় ক‌রোনা মহামারীর পর বি‌ভিন্ন দেশ থে‌কে আসা ক‌য়েক লাখ অ‌ভিবাসীর জী‌বনে বড় ধর‌নের অনিশ্চয়তা নে‌মে আস‌তে পা‌রে। এসব অভিবাসীর মধ্যে কয়েক লাখই বাংলাদেশি।

প্রথম আ‌লোর যুক্তরাজ‌্য প্রতি‌নি‌ধি ও ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম ব‌লেন, ‘ব্রিটে‌নের ইতিহাসে লেবার পা‌র্টি বরাবরই অভিবাসী‌দের প্রতি সহানুভু‌তিশীল ছিল। তবে এখন ই‌মি‌গ্রেশন নি‌য়ে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ‌দের সম‌র্থিত দল কনজার‌ভে‌টিভ পা‌র্টির সঙ্গে বাম ঘরানার লেবার পা‌র্টির দেওয়া প্রতিশ্রু‌তি ছিল কার্যত একই। তারই বাস্তবায়ন এখন আমরা দেখ‌ছি।’

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব‌রিস জনসন লন্ডনের মেয়র থাকাকালীন ২০০৮ সালে কয়েক দফায় ব্রিটেনে বৈধ কাগজপত্র বিহীন অবস্থায় বসবাসরতদের বৈধতা দেবার আশ্বাস দেন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দা‌য়িত্ব নেবার পরও সে প্রতিশ্রু‌তি পুর্নঃব‌্যক্ত করে‌ছিলেন তি‌নি। তখন বরিস বলে‌ছি‌লেন, তার সরকার ব্রিটে‌নে অ‌বৈধ অভিবাসী‌দের বৈধতা দিতে দ্রুত পথ খুজ‌ঁবে। তবে সে ল‌ক্ষ্যে কার্যত কোনও পদ‌ক্ষেপই আর নেন‌নি ব‌রিস ও তার প‌রের তিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

স‌ঠিক প‌রিসংখ্যান না থাক‌লেও প্রায় লক্ষা‌ধিক বাংলা‌দেশি বৈধ কাগজপত্রবিহীনভা‌বে ব্রি‌টে‌নে বসবাস কর‌ছেন। ব্রে‌ক্সিট পরবর্তী প‌রি‌স্থি‌তি‌তে তা‌দের বৈধতা দেওয়ার আশ্বাস মি‌লে‌ছিল। তখন অ‌নে‌কে ধারণা ক‌রে‌ছি‌লেন, নতুন জনশ‌ক্তি না এ‌নে যারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাস ও কাজ ক‌রছেন, তা‌দের বৈধতা দিলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। ব্রি‌টিশ অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত ক‌রে এ‌দের কাজ থে‌কে ট্যাক্স অর্জন কর‌তে পার‌ত সরকার।

এ বিষয়ে টাওয়ার হ‌্যাম‌লেটস কাউ‌ন্সি‌লের সা‌বেক ডেপু‌টি মেয়র অ‌হিদ আহমদ বাংলা‌ ট্রিবিউন‌কে ব‌লেন, ‘অ‌বৈধ অ‌ভিবাসী‌দের বৈধতা তো দু‌রের কথা, বরং প্রতি‌দিন সরকা‌রের তরফে অ‌ভিবাসনবি‌রোধী কড়াক‌ড়ি আ‌রো‌পের কথা বলা হ‌চ্ছে। কেয়ার ভিসাসহ বি‌ভিন্ন কা‌জের ভিসায় আসা হাজার হাজার মানুষ বেকার ও কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। সব মি‌লি‌য়ে গত এক দশ‌কের ম‌ধ্যে ব্রিটে‌নে সবচে‌য়ে বড় দুঃসময় পার কর‌ছেন ইমিগ্রান্টসহ সাধারণ মানুষ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.